পামওয়েল চাষ শুরুর আগে ভাবনা: পামওয়েল গাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে তিন থেকে চার বছর এ সময়ের আগে গাছে কোন ফল ধরবে না। সে কারণে অর্থ উপার্জনের কোন সম্ভাবনাও থাকবে না। শধু এ সময়ে পামওয়েল চাষিকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। কারণ জমি চাষ শুরু করে সবধরনের কাজেই অনেক শ্রমিক লাগবে। সে কারণে যখন যে সময় যে কোন অংকের টাকা খরচ করার মানসিকতা থাকতে হবে। কারণ পামওয়েল চাষে যত্ন আত্তিতে এতটুকু অবহেলা করলে তা ভাল পামওয়েল উৎপাদনে সহায়তা করবে না। তাতে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি।
পামওয়েল চাষের ধারা:
বীজ সংগ্রহ ও চারা উত্তোলন
পরিপক্ক, সুস্থ, সবল পামওয়েল বীজ সংগ্রহ করতে হয়। তবে পামওয়েল বীজের সুপ্ততা ভাঙতে যে ঘরে তাপমাত্রা অনেক বেশি সেখানে ০২ দিন রাখতে হয়। তারপর পলিব্যাগে পামওয়েলের বীজ বপন করলে তা থেকে চারা বের হতে ৯০ থেকে ১০০ দিন লাগবে। একটি কচি চারা পলিব্যাগ বা কনটেইনারে এক নাগাড়ে ৪ থেকে ৫ মাস রাখতে হয়। এরপর ২ থেকে ৪ পাতা হলেই চারাটি নার্সারিতে নিতে হয়।
নার্সারিতে চারার বয়সঃ ছোট্ট একটি চারা নার্সারিতে বসবাস করবে কমপক্ষে ১ বছর । তারপর যখন চারাটিতে ১৫ টি পাতা আসবে তখন সে চারাটি মূলজমিতে লাগানোর উপযোগি হবে।
মূল জমিতে চারা লাগানোঃ মূলজমিতে পামওয়েল চারা লাগানোর পর আবার অপেক্ষার পালা। এক সময় গাছে ফুল আসবে। প্রথমে আসবে পুরুষ ফুল। প্রত্যেকটি পাতার গোড়ায় গোড়ায় আসবে পুরুষ ফুল। কয়েক মাস ধরে গাছে শুধু পুরুষ ফুল ধরবে। তারপর আসে স্ত্রী ফুল। উভয়ের বসবাস আলাদা। এক সময়ে উপযুক্ত মাধ্যমের সাহায্যে পুরুষ ফুল স্ত্রী ফুলকে নিষিক্ত করে। তারপর এ নিষিক্ত স্ত্রী ফুল আস্তে আস্তে ফলের গোছায় পরিণত হয়।
পামওয়েলের জাতঃ বনে জঙ্গলে পামওয়েল গাছ জন্মালেও ভাল জাতের পামওয়েল গাছ সংগ্রহ না করলে সব পরিশ্রমই বৃথা যেতে পারে। চাষাবাদ উপযোগি পামওয়েলের জাতগুলো হলো- দুরা, পিসিফেরা, তেনেরা। এসব জাতের মাঝে তেনেরা  জাত থেকে সবচে’ বেশি পামওয়েল তেল সংগ্রহ করা যায়।
পামওয়েল ফল থেকে তেল সংগ্রহঃ পামওয়েলের জাতের ওপর নির্ভর করে তেল সংগ্রহের হার। তাল, নারকেলের মতো পামওয়েলের ফলও বেশ কয়েকটি অংশে বিভক্ত।  এগুলো হলো পাল্প বা শাঁস, বীজ ও কার্নেল। শাঁসের রঙ হলুদ। শাঁস মাড়াই কলে মাড়াই করার পর পাওয়া যায় পামওয়েল তেল। শাঁসের পরের অংশটি হলো খোল বা খোসা। এর ভিতরে থাকে কার্নেল। কার্নেল মাড়াই করে যে তেল পাওয়া যায় তাকে বলা হয় পাম কার্নেল ওয়েল। তবে এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা পরপরাগায়নের মাধ্যমে উচ্চফলনশীল পামওয়েল তেনেরা জাত উদ্ভাবন করেছেন যা থেকে তেল পাওয়ার পরিমাণ বেশি। সুষ্ঠু পরিকল্পনা, সঠিক পরিচর্যা ও পরিশ্রমে পামওয়েল চাষ এনে দিতে পারে আর্থিক স্বচ্ছলতা।